পাঠ ১০ : নেটওয়ার্কের ব্যবহার

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - কম্পিউটার নেটওয়ার্ক | | NCTB BOOK

মানুষ সামাজিক জীব। আদিকাল থেকে মানুষ নানা ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একসঙ্গে সামাজিকভাবে থাকতে লিখেছে। সমাজের সবার কিছু দায়িত্ব থাকে এবং সবাই মিলে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে শিখে।

সভ্যতার বিকাশের পর সামাজিকভাবে একসঙ্গে থাকার বিষয়টিও নতুন যাত্রা পেয়েছে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিতে যে নেটওয়ার্কের জন্ম হয়েছে, সেটিও আমাদের জীবনে একটা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আমরা অতীতে যে কাজগুলো করতাম, আজকাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সেই একই কাজ অন্যভাবে করতে শিখেছি। নেটওয়ার্কের সবচেয়ে বড় ব্যবহার হচ্ছে তথ্যকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা। আগে একটি তথ্য সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া অস ও কঠিন একটি কাজ ছিল। এখন মুহূর্তের মধ্যে একটি তথ্য শুধু যে নিজের পরিচিতদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি তা নয়, সেটি সারা দেশে, এমনকি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে পারি। শুধু তাই নয়, একসময় তথ্য ছিল সম্পদের মতো। যার কাছে তথ্য যত বেশি, সে তত ক্ষমতাশালী। নেটওয়ার্কের কারণে এ ধারণাটা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। এখন তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত। বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠান বিশেষ বিশেষ তথ্যকে নিজের জন্য আলাদাভাবে সংরক্ষণ করে কিন্তু অন্যান্য সাধারণ তথ্য এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। একজন খুব সাধারণ মানুষ আর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মানুষ দুজনেরই পৃথিবীর তথ্যভাণ্ডারে সমান অধিকার। দুজনেই একই তথ্যভান্ডার থেকে একই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।নেটওয়ার্ক দিয়ে তথ্যকে উপস্থাপন করার কারণে সারা পৃথিবীতেই নতুন একধরনের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। 

আঙুলের ছাপ স্ক্যান ফর্মা

একসময় যে তথ্যগুলো কাগজে সংরক্ষণ করতে হতো, এখন সেটি ডেটাবেসে সংরক্ষণ করা হয়। আগে সেই তথ্যগুলো কাগজ খেটে মানুষকে খুঁজে বের করতে হতো; কাজটি ছিল নিরানন্দময় এবং সময় সাপেক্ষ। এখন কম্পিউটারে আঙুলের টোকায় নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যে কেউ ডেটাবেসে তথ্য রাখতে পারে, প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে। একসময় যে কাজটি করার জন্যে অনেক ধরনের কাগজপত্রে অনেক ধরনের তথ্য রাখার প্রয়োজন হতো, এখন সেটি কোনো শক্তিশानী কম্পিউটারের ডেটাবেসে রাখা হয়। কাগজপত্রের ব্যবহার দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে বিমানের টিকেট।এক সময় বিমানের যাত্রীদের টিকিট হাতে নিয়ে বিমানবন্দরে যেতে হতো। এখন সারা পৃথিবীতে ই-টিকিটের প্রচলন হয়েছে এবং বিমানের কোনো যাত্রীকে আর বিমানের টিকিট হাতে করে নিতে হয় না। বিমানের কর্মকর্তারা যাত্রীর পরিচর থেকে সরাসরি তার টিকিটের তথ্য পেয়ে যান এবং যাত্রীদের বিমান ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দেন। সেই দিনটি আর বেশি দূরে নয়, যখন কাউকে আর নিজের পাসপোর্টটি সাথে নিয়ে ভ্রমণ করতে হবে না। যখন প্রয়োজন হবে, তখন তার আঙুলের ছাপ কিংবা চোখের রেটিনা স্ক্যান করে ডেটাবেস থেকে তার সকল তথ্য বের করে নিয়ে আসা হবে।

নেটওয়ার্কের অন্য ব্যবহারটি হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত সকল প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুযোগ। একসময় সকল প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার প্রত্যেকটি কম্পিউটারেই আলাদাভাবে রাখার প্রয়োজন হতো। এখন আর সেটি রাখতে হয় না। একটি মূল কম্পিউটার বা সার্ভারে সফটওয়্যার রাখা হয় এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যান্য সব কম্পিউটার সার্ভারে রাখা সেই সফটওয়্যার ব্যবহার করে। কাজেই ব্যক্তিগতভাবে একজন মানুষ কোনো মূল্যবান সফটওয়্যার না কিনেই বিনামূল্যে বা অত্যন্ত কম মূল্যে সেটি ব্যবহার করতে পারে। শুধু যে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারে তা নয়, একজন মানুষ তার ব্যক্তিগত সবকিছুই নিজের কম্পিউটারে না রেখে অন্য কোথাও রেখে দিতে পারে। যেকোনো সময় পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে সেটি ব্যবহার করতে পারে, সেরকম ব্যবস্থাও রয়েছে। এরকম একটি জনপ্রিয় সেবার নাম ড্রপবক্স (Dropbox ) এবং এই বইটি লেখার সময়েও যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণে ড্রপবক্স ব্যবহার করা হয়েছে।

দলগত কাজ : এখানে উল্লেখ নেই এমন নেটওয়ার্কের পাঁচটি ব্যবহার লেখ।

নতুন শিখলাম : ই-টিকেট, রেটিনা স্ক্যান, ড্রপবক্স।

Content added By
Promotion